অবসর যাপন | বিবিধার্থ-সঙ্গ্রহ


  • 15 Aug 2024

    পত্রিকা 

    %e0%a6%85%e0%a6%ac%e0%a6%b8%e0%a6%b0-%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%aa%e0%a6%a8-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a7%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5-%e0%a6%b8%e0%a6%99%e0%a7%8d%e0%a6%97
    Share
     

    অবসর সময়ে বাংলা পত্রিকা পাঠের সূচনা করে বিবিধার্থ-সঙ্গ্রহ। ১৮৫১ সালে বঙ্গভাষানুবাদক সমাজের প্রতিষ্ঠা হয়। ১৮৫১ সালেই এই সমাজের অনুদানে শুরু হয় বিবিধার্থ-সঙ্গ্রহ পত্রিকা। প্রথম সম্পাদক রাজেন্দ্রলাল মিত্র নারী, পুরুষ, পেশা বয়স নির্বিশেষে একটি পাঠক সমাজ কল্পনা করেছিলেন। পত্রিকায় থাকত নানা বিষয়ের প্রবন্ধ ও ছবি। কিশোর রবীন্দ্রনাথ এই ছবিওয়ালা মাসিকপত্র আবিষ্কার করেছিলেন সেজদাদা হেমেন্দ্রনাথের আলমারিতে। জীবনস্মৃতিতে রবীন্দ্রনাথ আক্ষেপ করেছেন, বিবিধার্থের মত ‘সর্বসাধারণের দিব্য আরামে পড়িবার একটি মাঝারি শ্রেণীর কাগজ দেখিতে পাই না।’ ১৮৫১ সালে, সূচনা পর্বে রাজেন্দ্রলাল ভেবেছিলেন বিদ্বজ্জনেরা বিবিধার্থ-সঙ্গ্রহ পড়ে সন্তুষ্ট নাও হতে পারেন। শিক্ষিত সমাজের কাছে তখন ছিল সংবাদ প্রভাকরতত্ত্ববোধিনী সহ আরো বেশ কিছু পত্রিকা। তিনি নিজেও তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সাথে যুক্ত ছিলেন। দ্বিধা সত্ত্বেও রাজেন্দ্রলাল একটি বৃহত্তর পাঠক সমাজ কল্পনা করেছিলেন, যাঁরা অবসর সময়ে বাংলা পত্রিকা পড়বেন। তিনি চেয়েছিলেন The Penny Magazine-এর আদলে একটি বাংলা পত্রিকা।

    আমাদিগের লিখিবার প্রনালী বিষয়ে পণ্ডিত মহাশয়দিগের অসন্তুষ্ট হইবার সম্ভাবনা আছে; কিন্তু ভরসা করি তদ্বিষয়ে তাঁহারা এতৎপত্রের লক্ষ্য স্মরণ করত আমাদিগকে ক্ষমা করিবেন। যাহাতে সাধারণ জনগণে অনায়াসে বিদ্যালাভ করে, যাহাতে বণিক্ এবং মোদক আপন২ কৰ্ম্ম হইতে অবকাশ মতে জগতের বৃত্তান্ত জানিতে পারে, যাহাতে বালক ও বালিকাগণ গল্পবোধে ক্রীড়াচ্ছলে এই পত্র পাঠ করিয়া আপন আপন জ্ঞানের বিস্তার করে, যাহাতে যুবকগণ ইন্দ্রিয়োদ্দীপক গ্রন্থ সফল পরিহরণ পূর্ব্বক উপকারক বিষয়ের চর্চা করে, যাহাতে বৃদ্ধ ব্যক্তি তুষ্টিজনক সদালাপ করিতে সক্ষম হয়েন, এমত উপায় প্রদান করা এই পত্রের লক্ষ্য… বিবিধার্থ সঙ্গ্রহ, ১:১ (শকাব্দ ১৭৭৩,কার্তিক) পৃ.২।

    বিবিধার্থ-সঙ্গ্রহ যে বৃহত্তর পাঠক সমাজে সমাদৃত হয়েছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায় দ্বিতীয় বর্ষে। দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম সংখ্যায় সম্পাদক লেখেন, প্রথম বর্ষে প্রত্যেক সংখ্যার ১২০০ কপি ছাপা হয় এবং তিনি মনে করেন ১২০০ কপি কম করে হলেও ১০০০০ জন পাঠক পড়েছেন। দ্বিতীয় বর্ষ থেকে পাতার সংখ্যা ১৬ পাতা থেকে করা হয় ২৪ পাতা; গ্রাহকমূল্যও বৃদ্ধি করা হয়।

    রাজেন্দ্রলালের লক্ষ্য ছিল দেশবিদেশের বিচিত্র বিষয় সম্ভারে বিবিধার্থের পাতা ভরিয়ে তোলা। ভারতের ইতিহাস নির্মাণের প্রচেষ্টা শুরু করেছিলেন বিবিধার্থ-সঙ্গ্রহ পত্রিকার মাধ্যমে। তিনি অলৌকিক ক্রিয়া, কাল্পনিক গল্পকথা সম্বলিত পুরাবৃত্তের ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে এসে ভারতের ইতিহাস রচনার প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন। ভারতের ইতিহাস সংক্রান্ত প্রবন্ধ প্রথম সংখ্যা থেকেই ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছে। দ্বিতীয় বর্ষ থেকে গ্রন্থ সমালোচনা প্রকাশিত হতে থাকে। গ্রন্থ সমালোচনা কিভাবে করা যেতে পারে সেই নিয়েও আলোচনা রয়েছে বিবিধার্থ-সঙ্গ্রহেবিবিধার্থের প্রত্যেকটি সংখ্যাতেই দেশবিদেশের পশুপাখির ছবি সহ বিবরণ থাকত। অনেকেই মনে করতেন পশুপাখির বিবরণ দিয়ে পাতা না ভরিয়ে অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয় প্রকাশ করা যেতে পারে। কিন্তু রাজেন্দ্রলাল মনে করেছিলেন সাধারণ জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য প্রাণীজগতের সাথে পরিচয় থাকা জরুরী। অদেখা পশুপাখির চিত্রগুলি ছিল বিবিধার্থের বিশেষ আকর্ষণ। অনেক সময় বিদেশ থেকে চিত্র ফলক আসতে দেরি হলে প্রবন্ধের সাথে ছবি দেওয়া যেতনা কিন্তু পরে কোন সংখ্যায় সেই ছবি প্রকাশ করা হত।


    রাজেন্দ্রলালের এই প্রচেষ্টা সমাদৃত হলেও, বিবিধার্থ-সঙ্গ্রহের প্রকাশনাকাল মোটে ৭ বছর। অনেক সময় পত্রিকার সংখ্যাগুলি (issue) ঠিক সময়ে প্রকাশ করা যেতনা। পত্রিকা প্রকাশনা যে একটি জটিল প্রক্রিয়া তার উল্লেখ পাওয়া যায় একটি প্রবন্ধে:

    প্রবন্ধের বিষয় নির্বাচন বিবিধার্থ-সঙ্গ্রহার্থে (প্রথম) বিদ্যা, (দ্বিতীয়) বিদ্যা ব্যবসায়ী, (তৃতীয়) তদ্ব্যবসায়োপযোগ্য অস্ত্র, অর্থাৎ কাগজ, লেখনী, ও মসি, (চতুর্থ) মুদ্রাক্ষর, (পঞ্চম) অক্ষর সংযোজক, (যষ্ঠ) মুদ্রাযন্ত্র ও মুদ্রাকর, (সপ্তম) চিত্রকর, (অষ্টম) পুস্তক বদ্ধক, এই অষ্টাঙ্গ যোগের প্রয়োজন; তদ্ব্যতীত বিবিধার্থ সঙ্গ্রহ কদাপি স্বচ্ছন্দে প্রস্তুত হইতে পারে না।

    ‘বিবিধার্থ-সঙ্গ্রহোপযোগিবিষয়ের নিরূপণ,’ বিবিধার্থ সঙ্গ্রহ, ২:১৫ (শকাব্দ ১৭৭৪,ফাল্গুন) পৃ.৬৪।

    ৬ বছর বিবিধার্থ-সঙ্গ্রহ পত্রিকা সম্পাদনা করেন রাজেন্দ্রলাল এবং ৭ম বর্ষটি সম্পাদনা করেন কালীপ্রসন্ন সিংহ। প্রকল্পperiodicaldb-তে ৭ বছরের ৭১টি সংখ্যার উদ্ধৃতাংশ সহ রচনাসূচী পাওয়া যাবে; ৯টি সংখ্যা পাওয়া যায়নি। এছাড়া রচনাকারদের একটি তালিকা পাওয়া যাবে, তবে বেশিরভাগ লেখাই অস্বাক্ষরিত। ধারাবাহিক রচনাগুলিরও তালিকা পাওয়া যাবে ‘পত্রিকা সংযোগ’ বিভাগে; তালিকাভুক্ত শিরোনামে click করলে, ধারাবাহিক রচনার সূচী একসাথে দেখতে পাওয়া যাবে।

    প্রত্যেকটি রচনা নিশানা বা বিষয় দিয়ে চিহ্নিত করা আছে। বিবিধার্থ-সঙ্গ্রহের উল্লেখযোগ্য নিশানা গুলি: গ্রন্থ পরিচয়-সমালোচনা, পশুপাখি, ইতিহাস চর্চা-নির্মাণ ইত্যাদি।

    নিশানার তালিকা (১৫।০৮। ২০২৪)

    প্রকল্পperiodicaldb-তে সংযোজিত অন্যান্য পত্রিকার তালিকা (১৫।০৮। ২০২৪)

    Subscription


     

    Share
     

     

       
     

    Leave a Reply



    Privacy policy