'বামাগণের রচনা'
01 Jul 2024
প্রকল্পperiodicalDB blog-এ শুরু হল ধারাবাহিক বিভাগ প্রকল্পperiodicalDB চয়ন। এই বিভাগে প্রকাশিত হবে বাংলা পত্রপত্রিকা থেকে সংগৃহিত কবিতা, প্রবন্ধ, উদ্ধৃতাংশ, বিজ্ঞাপন, ইত্যাদি। বিষয়/ ব্যক্তি/ ঘটনা, ইত্যাদির সূত্র ধরে রচনা চয়ন করা হবে।
প্রথম চয়ন: প্রথম প্রজন্মের শিক্ষিত নারী ও পত্রপত্রিকায় তাঁদের লেখা প্রকাশ
বামাবোধিনী পত্রিকাকে এই বিষয়টির আকর পত্রিকা হিসাবে বেছে নেওয়া হল। দ্বিতীয় সংখ্যায় বামাবোধিনীতে মহিলাদের লেখা পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয় এবং সপ্তম সংখ্যা থেকে শুরু হয় নিয়মিত বিভাগ ‘বামাগণের রচনা’। সেই রচনাগুলি থেকে কিছু রচনা, সম্পাদকীয় মন্তব্য ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য প্রকল্পperiodicalDB blog-এ সংগৃহীত হবে।
বামাবোধিনীর রচনাসূচী এখন periodicalDB-র database-এ নেই; ভবিষ্যতে সংযোজিত হবে।
‘বামাগণের রচনা’ বিভাগ শুরু হয় কোন্নগরের শ্রীমতী রমাসুন্দরীর কবিতা দিয়ে। তিনি বামাবোধিনী পত্রিকার গ্রাহক ছিলেন। নির্দিষ্ট বিভাগটি শুরু হওয়ার আগেও রমাসুন্দরীর কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল। প্রকল্পperiodicalDB চয়নের প্রথম কিস্তিতে দুটি কবিতাই সম্পাদকীয় মন্তব্যের সাথে পুনঃপ্রকাশিত হল। দুটি কবিতাতে আছে ব্যক্তিগত আধ্যাত্মিক উপলব্ধির দুটি ভিন্ন চিত্র।
নিশানা: কবিতা, অভিজ্ঞতা-উপলব্ধি-স্মৃতি
বামাবোধিনী পত্রিকা ১.৬ (মাঘ, ১২৭০), পৃ: ৭৬
প্রেরিত পত্র
ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা
অবিকল প্রকাশিত
কোথা ওহে জগদীশ, জগত জীবন।
কৃপা করি কর মন, পাপ বিমোচন॥
অধর্ম্মের পথ হোতে, কর মোরে ত্রাণ৷
পরাধীনা নারী আমি নাহি কিছু জ্ঞান॥
নাহি পারি হিতাহিত করিতে বিচার।
লঙ্ঘন করি হে কত, নিয়ম তোমার৷
এরূপ অজ্ঞানে অন্ধ. আমি মূঢ় নতী।
না পারি বর্ণিতে নাথ, তোমার শকতি॥
জগতের শোভা ওহে, কিবা মনোহর।
সকল পদার্থ হয়, অতি হিতকর॥
হায়! কি চমৎকার, চারু শশধর।
কেমন শোভিত করে নক্ষত্র নিকর॥
কি দিব উপমা তার, নাহিক তুলনা।
করিতে না পারে কেহ, তাহার বর্ণনা॥
ফল ফুলে বৃক্ষগণ, কিবা সুশোভিত।
মলয়া পবন তায়, করয়ে মোহিত॥
পর্ব্বত গহ্বরে আর, নিবড় কাননে।
শোভিত করয়ে কিবা পশু পক্ষিগণে॥
এ সকল মহিমার, করিতে তুলন।
মনুষ্য নিৰ্ম্মিত দ্রব্যে, না হয় কখন॥
অতএব ওহে নাথ, এই ধরণীতে।
প্রকৃতির শোভা কেহ, নাপারে বর্ণিতে॥
কাহার বা সাধ্য পিতঃ হইবে এমন৷
তোমার মহিমা ওহে করিতে বর্ণন॥
তাহাতে আবার আমি, জ্ঞানহীনা নারী।
তোমার সৃজিত দ্রব্য, বর্ণিতে না পারি॥
কেমনে এমন সাধ্য, হইবে আমার৷
বর্ণিতে যাহাতে’ পারি, মহিমা তোমার॥
অতএব যাত মম, হয় এই মন।
দিবা নিশি তোমারে হে করিতে স্মরণ॥
এই ভিক্ষা এদিনায় দেহ কৃপাময়।
তোমার আশ্রয়ে কভু, বঞ্চিত না হয়॥
১০ মাঘ সন ১২৭০
শ্রীমতী রমাসুন্দরী, কোন্নগরনিশানা: কবিতা, অভিযাত্রা-ভ্রমণ-যাত্রা-তীর্থ
বামাবোধিনী পত্রিকা ১.৭ (ফাল্গুন, ১২৭০), পৃ: ৮৮
বামাগণের রচনা
কাশী-দর্শন
অবিকল প্রকাশ
বৃহস্পতিবারে যবে, যাইনু কাশীতে।
প্রথম আনন্দ মোর হইল হৃদিতে॥
মনে করিলাম বুঝি, ভাল এ নগর।
যার নাম হয় ওহে, খ্যাত চরাচর॥
পরেতে যখন গেনু, গলীর ভিতর।
দুর্গন্ধ আইল যবে, নাসিকা ভিতর॥
তখন হইল মম, যে রূপ অন্তর।
লিখিব কি তাহা ওহে, করি সবিস্তার॥
তৎপরে যাইনু যবে, বাসার ভিতর।
গ্রীষ্মেতে হইল মন দেহ জর জর॥
ভাল বায়ু, যাইবারে নাহি আছে দ্বার।
সে সকল গৃহ যেন, হয় কারাগার॥
তখনি বুঝিনু ইহা, যে রূপ প্রদেশ।
যার নাম হয় ওহে, বিখ্যাত বিশেষ॥
পর দিন যে সময় দেখিতে দুর্গেশ।
যাইলাম মনে করি, আনন্দ অশেষ॥
যেমন দেখিব এবে, বারাণসী শিব।
যাহার কারণ মুক্তি পায় যত জীব॥
দেখিনু পরেতে ওহে, সেই বিশ্বেশ্বর।
মন্দিরের মধ্যে আছে, কেবল প্রস্তর॥
দেখিতে না হয় ভাই, কিছু চমৎকার।
কেবল তাহাতে আছে, কাপট্য আচার॥
পুষ্পদত্ত কেদারেশ, আদি দেবগণ।
নাহি হয় তারা কেহ, নয়ন রঞ্জন॥
কেবল মুর্খেতে ওহে, ভক্তির কারণ।
সাক্ষাৎ ঈশ্বর যেন করে দরশন॥
সে সময় মম মন, যে রূপ হইল।
একেবারে দুঃখ নীরে মগন হইল॥
কেবল সন্তাপ হলো, অজ্ঞানীর তরে।
আহা যারা ইহাদের দেব জ্ঞান করে॥
মনে ভাবে আর যারা করে হেথা বাস।
মোক্ষ ফল পেয়ে হব, পূৰ্ণ মন আশ॥
আহা তারা হয় অতি কৃপা পাত্র দীন।
অজ্ঞানতা পিশাচের কেবল অধীন॥
এই রূপ মম মনে, কত দুঃখোদয়।
হইল যে তাহা ওহে নাহিক নির্ময়॥
লেখনী না পারে তারা, করিতে লিখন।
রসনা না পারে তাহা, করিতে বর্ণন॥
শ্রীমতী রমাসুন্দরী, কোন্নগর
বামাবোধিনী পত্রিকা ১.৭ (ফাল্গুন, ১২৭০), পৃ: ৮৭
বামাগণের রচনানিশানা: পত্রিকা সম্পাদকীয়-মন্তব্য
গত সংখ্যায় আমরা একটি স্ত্রীলোক রচিত পদ্য প্রকাশ করিয়াছিলাম। পাঠকগণ পড়িলেই বুঝিতে পারিবেন যে এতদ্দেশের পুরুষপদ্যলেখকগণের রচনা হইতে তাহা বড় নিকৃষ্ট নহে। বস্তুতঃ স্ত্রীলোকের রচিত বলিয়া নির্দ্দেশ না করিলে প্রায় কেহই ইহা স্ত্রীলোকের বলিয়া সন্দেহ করিতে পারিত না। উহা অবিকল প্রকাশ করার তাৎপর্য এই যে, পাঠকগণ স্ত্রীলোকের রচনা দেখিয়া নিজে নিজেই তাহার দোষগুণ বিচার করিবেন। এক্ষণে সেই লেখিকার আর একটি রচনা প্রকাশ করা যাইতেছে। এটি পূর্ব্বের ন্যায় উৎকৃষ্ট নহে। কিন্তু এটি তাঁহার ভ্রাতাকে একটি পত্র স্বরূপ লিখিয়াছিলেন, এই বিবেচনায় ইহার দোষ অনেক স্থলে ধরা যায় না। কে আত্মীয়ের প্রতি নিজের মনের ভাব উৎকৃষ্ট ভাষায় প্রকাশ করিয়া থাকে? তাঁহার ভ্রাতাই আমাদিগকে এটি প্রকাশ করিতে দিয়াছেন; যাহা হউক এবারেও রচনাটি অবিকল প্রকাশ করা গেল। রচয়িত্রীর ভ্রম ও অজ্ঞানের প্রতি দয়া প্রকাশ দেখিয়া আশা হইতেছে যে যদিও আমাদের দেশে বিদ্যাবতী ও জ্ঞানবতী স্ত্রীলোক অতি অল্প, অথাপি তাঁহাদের হইতেই সমস্ত স্ত্রী সমাজের অজ্ঞান তিমির নষ্ট হইতে পারিবে।
চয়ন নারী নিশানা বামাবোধিনী পত্রিকা
Privacy policy